ঢাকা , সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫ , ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ফ্লাইট এক্সপার্ট, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির প্রতারণা সোনারগাঁওয়ে বিকল্প সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ চলাচলে চরম ভোগান্তি ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক করেছে এনবিআর বাংলাদেশকে ১৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে এডিবি ডিএসইতে লেনদেন ছাড়ালো ১১০০ কোটি টাকা গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে অস্ট্রেলিয়ায় লাখো মানুষের বিক্ষোভ রাশিয়ায় ৬০০ বছর পর বিরল অগ্ন্যুৎপাতের জেরেই ভূমিকম্প কৃষ্ণ সাগরের কাছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পাল্টাপাল্টি হামলা তবুও কাটছে না খাদ্য সংকট চুয়ামেনিকে ছাড়ছে না রিয়াল, ফিরিয়ে দিল হাজার কোটির প্রস্তাব ডি ভিলিয়ার্সের সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিকে শিরোপা দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ বলে রুদ্ধশ্বাস জয়: পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজে সমতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ মার্তার জাদুতে ইতিহাস গড়ল ব্রাজিল: নাটকীয় ফাইনালে কোপা আমেরিকার নবম শিরোপা মেসির চোটে ছিটকে যাওয়ার পরও টাইব্রেকারে দুর্দান্ত জয় মায়ামির স্থগিত পাকিস্তান-আয়ারল্যান্ড দ্বিপাক্ষিক সফর নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চান দানি ওলমো এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সব ম্যাচ আবুধাবিতে, ফাইনাল দুবাইয়ে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ হাসপাতাল ভাঙচুর এখনো ভয় কাটেনি মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীদের ৪ টেরাবাইট ব্যান্ডউইডথের মাইলফলকে বাংলাদেশ সাবমেরিন
সমাজসেবা অধিদপ্তরের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রকল্প

বিপুল ব্যয়েও মিলছে না আশানুরূপ সুফল

  • আপলোড সময় : ০৩-০৮-২০২৫ ০৪:১২:২৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৩-০৮-২০২৫ ০৪:১২:২৬ অপরাহ্ন
বিপুল ব্যয়েও মিলছে না আশানুরূপ সুফল
সমাজসেবা অধিদপ্তরের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রকল্পে বিপুল ব্যয়েও আশানুরূপ সুফল নেই। মূলত অনগ্রসর ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠির আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যেই বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। আর প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। কিন্তু নানা অনিয়মে ওসব প্রশিক্ষণে তেমন সফলতা আসেনি। বরং প্রকল্পে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান এবং আর্থিক লাভের কথা বলা হয়েছিল, ধারেকাছেও তার সফলতা নেই। অথচ প্রশিক্ষণের নামে নেয়া প্রকল্পের কাজ এবং খরচ শতভাগ দেখানো হয়েছে। আর প্রকল্পের উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাটের প্রমাণ মিলেছে। ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত প্রকল্পে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সব কিছুতেই দুর্নীতির তথ্য মিলেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘অনগ্রসর ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ’ প্রকল্পটিকে শতভাগ সফল দেখানো হয়েছে। খরচ এবং বাস্তবায়ন প্রায় শতভাগ দেখানো হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের কথা বলা হলেও বাস্তবে ফল প্রায় শূন্য। প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৬৪০ জনকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কিন্তুমাত্র ১২১ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২ হাজার ৫৪৫ জন ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিলেও মাত্র ৭২ জন কর্মসংস্থানে যুক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ প্রকল্পের ব্যয় প্রশিক্ষণার্থীদের জীবনে কার্যত কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। কিন্তু প্রশিক্ষণের নামে ষোলোআনা অর্থই খরচ হয়েছে। তাছাড়া আরো করুণ প্রকল্পের আর্থিক অর্জনের চিত্র। প্রকল্পের আওতায় আর্থিক অর্জনের কথা ১ টাকায় আয় হবে ৯ টাকা ৬২ পয়সা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ১ টাকায় আয় হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৩৬ পয়সা। তাছাড়া প্রায় ৩৮৫ কোটি টাকা প্রকল্পের সম্ভাব্য উপকারিতা ধরা হয়েছিল কিন্তুমাত্র ১০ কোটি টাকার কিছু বেশি অর্জিত হয়েছে। কিন্তু সেটিও টেকসই নয়। সূত্র জানায়, প্রকল্পের প্রশিক্ষণে কিছু প্রশিক্ষণার্থী লাভবান হলেও বেশিরভাগই কাজে আসেনি। প্রকল্পটি অনগ্রসর ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে শুরু হলেও বাস্তবে স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার পরিচিত ব্যক্তিরা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছে। ফলে প্রকল্পের প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। প্রশিক্ষণটি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চলমান ছিল এবং দুটি করে ব্যাচে পরিচালিত হয়। প্রকল্পে ড্রাইভিং ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও কার্যক্রমের মান নিয়ে প্রশিক্ষণার্থীরা সন্তুষ্ট নন। ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ অধিকাংশ স্থানে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এবং তাতে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগকে গাড়ি চালানোর সুযোগ না দিয়ে শুধু বাহ্যিক বর্ণনা শেখানো হয়। একইভাবে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ২১ দিনের নির্ধারিত সময়ের পরিবর্তে অনেক স্থানে ১৫ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে শেষ করা হয়। এমনকি প্রশিক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ ছিল না। তাছাড়া কম্পিউটার প্রশিক্ষণে অপরিপক্ব শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, প্রশিক্ষণার্থী প্রকল্প থেকে নোটবুক, কলম, নাশতা, এবং ভাতা প্রদানের কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো মেলেনি। তবে কিছু স্থানে সীমিত ভাতা প্রদান করা হলেও তা প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। তাছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে চাকরির সুযোগ সৃষ্টির জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিগত ২০২০ সালের ফেব্রæয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি লালমনিরহাট, জামালপুর, ভোলা ও পটুয়াখালী জেলার ২৫টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও নামসর্বস্ব বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গেøাবাল রুরাল এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (জিআরইএস) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ১৮৫ জন তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। খাতা-কলমে তাদের অনেককেই এতিম কিংবা স্কুল ড্রপআউট হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে প্রশিক্ষণের আওতায় রাখা হয় কম্পিউটার, ড্রাইভিং এবং গ্রাফিক ডিজাইন, যা ছিল অনেকাংশে লোক দেখানো। ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য প্রকল্প অফিস থেকে কোনো সহযোগিতা বা তথ্য প্রদান করা হয়নি। এদিকে আইএমইডির মূল্যায়নে ছোট এ প্রকল্পের প্রশিক্ষণে সফলতা না এলেও ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। নানা অনিয়ম- দুর্নীতির জন্য মাত্র ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের ওই প্রকল্পে ১৯৬টি অডিট আপত্তি উঠেছে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা অডিট আপত্তির সঠিক জবাব দিতে না পারায় বেশিরভাগই নিষ্পত্তি হয়নি। অডিট আপত্তির তথ্যানুযায়ী, অতিরিক্ত প্রশিক্ষণার্থী, প্রশিক্ষকের সম্মানী, খাবার, যাতায়াত ভাতা, এমনকি জ্বালানির খরচ দেখিয়ে সরকারি অর্থ লোপাট করা হয়েছে। শুধুমাত্র অতিরিক্ত প্রশিক্ষণার্থী দেখিয়ে ৮০ লাখ টাকার বেশি তুলে নেয়া হয়। ভুয়া খাবারের ব্যয় দেখিয়ে আরো সাড়ে ৭ লাখ টাকা, আয়কর কর্তনে অনিয়মে ২১ লাখ আর প্রকল্প শেষে ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকার কম্পিউটার ও আসবাবপত্র উধাও হয়ে যায়। জ্বালানির ব্যয়ের নামে তোলা হয় আরো কয়েক লাখ টাকা। আর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই প্রশিক্ষক নিয়োগ দেখিয়ে সম্মানী বাবদ আরও অর্থ তুলে নেয়া হয়েছে। অথচ প্রকল্প শুরুর সময় বলা হয়েছিল প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। কিন্তু অনেকেই ওই টাকা পাননি। প্রশিক্ষণ শেষে সনদপত্র দেওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ প্রশিক্ষণার্থীকে সনদপত্র দেয়া হয়নি। এমনকি সনদ দেয়ার জন্য ১০০ টাকা করে নেয়া হয়। কিন্তু সনদ না দিলেও ওই টাকা ফেরত দেয়া হয়নি। অন্যদিকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের দুজন কর্মকর্তা ওই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমে পিডি ছিলেন হেলাল উদ্দিন ভ‚ঁইয়া। পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব পান স্বপন কুমার হালদার। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের বিষয়ে স্বপন কুমার হালদার জানান, অনিয়মের বিষয়ে আমার জানা নেই। সঠিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। সব বিল-ভাউচার দেখেই বিল পরিশোধ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থী সবার জন্য সনদ তৈরি করা হয়েছিল, তারপরও তারা কেন পায়নি সেটা জানা নেই। আর আইএমইডির প্রতিবেদনে যে অডিট আপত্তির কথা বলা হয়েছে সেটা সঠিক নয়। এতোগুলো অডিট আপত্তি ছিল না।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স